​জীবনের উদ্দেশ্য

পিতামাতার জীবনের শাশ্বত উদ্দেশ্য যেমন হয় সন্তানদের আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা, এরই মাঝে মানুষের সন্তানেরা সব সময় আদর্শ অপেক্ষা অসৎ হয়ে ওঠে, কারণ মানব পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা অপেক্ষা 'টিকে থাকার প্রতিযোগিতায়' ব্যস্ত থাকেন বেশি, যে কারণে মানুষ তার সন্তানদের উপর পুরো মনোযোগ দিতে ব্যর্থ। কিন্তু গাছদের জীবন ও বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই কেবল তার সন্তানদের আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা, যে কারণে গাছদের জাতগত পরিচয় আপন ফল সম্পূর্ণভাবে বহনে সক্ষম। বঙ্কিম আরও ধারণা করতেন যে, গাছদের কেবল তার সন্তানদের আদর্শ রূপে গড়ে তোলা অপেক্ষা ভিন্ন কোনো কাজ নেই, তাদের জীবনের শাশ্বত ও অনন্ত উদ্দেশ্যই যেনো সন্তানদের আদর্শ রূপে গড়ে তোলা এ যেনো ঈশ্বরের ইচ্ছা বা ঐশ্বরিক নির্দেশনা, যা গাছেরা পালনে বাধ্য। বঙ্কিম হয়তো এরই মাধ্যমে অস্বীকার করছেন গাছদের স্বীয় ইচ্ছাশক্তির প্রভাব, প্রকৃতির যোজন-বিয়োজনে কতটা অটুট বৃক্ষরাজি, পরিবেশে তাদের ব্যক্তিত্বের প্রভাব ইত্যাদি। প্রকৃতির প্রয়োজনে ভারসাম্য বজায় রাখতে গাছেরা কখনোবা নিজের পাতাদের ঝরিয়ে ফেলে, আগত মুকুলদের কিছু অংশকে বিনষ্ট করে, গায়ে এঁটে থাকা বাকলগুলোকে খসিয়ে দেয়, অতঃপর নব রূপে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে নতুন মৌসুমের নামে। মানুষের নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তনে, বৃক্ষেরা সংগঠিত করে নীরব বিপ্লব, যা অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়ে প্রকৃতিতে এনে দেয় মহামারী, বিপর্যয় এবং তখনই প্রকৃতি মানুষের সমাজে চালায় ত্রাসের রাজত্ব।

Comments

Popular posts from this blog

যাপনে জীবনের প্রভাব

​নিষ্প্রাণে প্রাণের সঞ্চার