Posts

Showing posts from September, 2025

যাপনে জীবনের প্রভাব

শিল্প যাপনে জীবনের প্রভাব শিল্প যাপন ভূমিকা মতবাদের বিবর্তন পুঁজিবাদের কৌশল বাংলাদেশের বাস্তবতা শেষ কথা ভূমিকা মতবাদের বিবর্তন পুঁজিবাদের কৌশল বাংলাদেশের বাস্তবতা শেষ কথা শিল্প যাপনে জীবনের প্রভাব শিল্প বিপ্লব পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাদের বিকাশ কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে এবং শ্রেণি বিভাজন তৈরি করেছে, তার একটি গভীর বিশ্লেষণ। এই বইটি দেখায় কীভাবে খ্যাতি, মতবাদ এবং অর্থনৈতিক কাঠামো একে অপরের সাথে জড়িত। মতবাদের বিবর্তন ও খ্যাতির বিড়ম্বনা ...

​নিষ্প্রাণে প্রাণের সঞ্চার

গাছপালা, ইট, পাথর, মাটি, বায়ু বা আগুন, অচেতন মননে সবই জড়। আবার মনের চৈতন্যে যেনো এরা সবাই প্রাণ। "শৈল্পিক মন নিষ্প্রাণে করে দান, নব প্রাণ" এটি একটি ডাইমেনশন বা দেখার মাত্রা। যে দৃষ্টিকোণ স্থান পেয়েছে 'তৃতীয় চোখ বা দিব্যদৃষ্টি' শব্দসমূহে। নিষ্প্রাণ শব্দগুচ্ছ একত্রে পরপর সাজালে জ্বালাময়ী বক্তৃতা তৈরি হয়, যা একটি জাতিকে ঘুরে দাঁড়াতে শেখায়, সংগঠিত করে সফল বিপ্লব, প্রতিবাদের ভাষায় শক্তি সঞ্চার করে, তীক্ষ্ণ করে বিচক্ষণতা। অতঃপর প্রাঞ্জলতার প্রতীকী স্বরূপ প্রকাশ পায় লেখাটি, এ যেন একটি লেখা তথা সাহিত্যের প্রাণ, যা সৃষ্টি হয় কোনো শৈল্পিক লেখকের চিন্তনে, এ প্রাণ শক্তি সঞ্চার করে শৈল্পিক পাঠকের মননে। আর, অচেতন পাঠক কিংবা অসার লেখকের কাছে এ পাঠ্য কেবলই নিরর্থক, মৃত ও অচল; অতঃপর তাদের কাছে লেখাটি নিষ্প্রাণ।

​জীবনের উদ্দেশ্য

পিতামাতার জীবনের শাশ্বত উদ্দেশ্য যেমন হয় সন্তানদের আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা, এরই মাঝে মানুষের সন্তানেরা সব সময় আদর্শ অপেক্ষা অসৎ হয়ে ওঠে, কারণ মানব পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা অপেক্ষা 'টিকে থাকার প্রতিযোগিতায়' ব্যস্ত থাকেন বেশি, যে কারণে মানুষ তার সন্তানদের উপর পুরো মনোযোগ দিতে ব্যর্থ। কিন্তু গাছদের জীবন ও বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই কেবল তার সন্তানদের আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা, যে কারণে গাছদের জাতগত পরিচয় আপন ফল সম্পূর্ণভাবে বহনে সক্ষম। বঙ্কিম আরও ধারণা করতেন যে, গাছদের কেবল তার সন্তানদের আদর্শ রূপে গড়ে তোলা অপেক্ষা ভিন্ন কোনো কাজ নেই, তাদের জীবনের শাশ্বত ও অনন্ত উদ্দেশ্যই যেনো সন্তানদের আদর্শ রূপে গড়ে তোলা এ যেনো ঈশ্বরের ইচ্ছা বা ঐশ্বরিক নির্দেশনা, যা গাছেরা পালনে বাধ্য। বঙ্কিম হয়তো এরই মাধ্যমে অস্বীকার করছেন গাছদের স্বীয় ইচ্ছাশক্তির প্রভাব, প্রকৃতির যোজন-বিয়োজনে কতটা অটুট বৃক্ষরাজি, পরিবেশে তাদের ব্যক্তিত্বের প্রভাব ইত্যাদি। প্রকৃতির প্রয়োজনে ভারসাম্য বজায় রাখতে গাছেরা কখনোবা নিজের পাতাদের ঝরিয়ে ফেলে, আগত মুকুলদের কিছু অংশকে বিনষ্ট করে, গায়ে এঁটে থাকা বাকলগুলোকে খ...

​দৃষ্টিতে প্রাণের প্রভাব

আমি যা দেখছি, তা আদৌ সত্য নয়, তা কেবলই আমার মনের ধারণা মাত্র। প্রকৃতির যে সকল রূপ, রং ও গন্ধে আমার মন মেতে ওঠে, তা শুধু মাত্র আমার মস্তিষ্কের কল্পনা। প্রকৃতিতে রং নেই, নেই স্বীয় রূপ, গন্ধ বা প্রাণ। আছে শুধু বস্তু জগতের উপাদান। আমার মনই কেবল জড় আর জীবদের আলাদা করছে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম, কিছু তফাৎ। প্রাথমিক চিন্তনে আমরা গাছদের জড় বলে ভেবেছিলাম, পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হল গাছদেরও প্রাণ আছে এবং এরা নির্জীব নয়, তাদেরও আছে জন্ম-মৃত্যুর চক্রাকার নিয়ম, নিয়তি ও পরিণতি। এরাও জন্মায়, বড় হয়; এদেরও আছে শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বৃদ্ধকাল।

​সভ্যতার বিবর্তন

​ প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে, সংস্কৃতি বিনা কখনো সম্প্রদায় গড়ে ওঠে না, প্রতিটি সংস্কৃতি বিবর্তনের ছোঁয়ায় বিবর্তিত হতে হতে সভ্য হয়ে ওঠে, পরিশেষে সভ্য হয়ে ওঠা উৎকৃষ্ট সংস্কৃতিটুকু অবশ্যই সুন্দরের রুচিবোধ জাগাবে। প্রতিটি সংস্কৃতিকে যার যার জায়গা থেকেই বোধে ধারণ করা উচিত, প্রতিটি সংস্কৃতি এক একটি দর্শন, এক একটি দৃষ্টিকোণ, এক একটি ভাবনার সমাহার। কিন্তু যারা অপর সংস্কৃতিকে অপ বলে জ্ঞান করে, তারা সংস্কৃতির বোধ থেকে সাম্প্রদায়িক নয়, বরং এরাই অধার্মিক। এরাই বাতাসে ছড়ায় ঈর্ষা আর অপ-সংস্কৃতির বীজ, যা ভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে সম্প্রীতি অপেক্ষা বিদ্বেষ বেশি জাগায়। ​ আমাদের একটি সোনালী সময় ছিল, সুন্দর সংস্কৃতি ছিল, ছিল ভৈরবীর মতো বোধ, যে বোধ লিঙ্গভেদে ভাবতে শেখায়। ছিল এমন একটি শিক্ষা, যা সকল প্রাণে বা বস্তুতে নিজেকে সমর্পণ করতে শেখায়, যে দৃষ্টি - নগ্নতায় কখনো যৌনতা আবিষ্কার করেনি, এমন একটি পরিবার যেখানে যৌথ বন্ধন বজায় থাকত অটুট: বংশপরিক্রমায়। অথচ এ সংস্কৃতি, এ সুর, এ চর্চা এ অঞ্চলেরই, আমরাই গড়েছি রাগের কাঠামো। বাংলার বায়ুপ্রবাহে আমি শঙ্খসুর শুনতে পাই, যে কণ্ঠ আমার আদিপুরুষের, এ মা...

​সন্দিহান মনুষ্যত্ব

দার্শনিক দেকার্ত এর মতে, "ইন্দ্রিয় যেহেতু ভ্রম দ্বারা বিভ্রান্ত হতে পারে, সেহেতু ইন্দ্রিয়ও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়, সেহেতু যুক্তি দিয়ে সত্যান্বেষণ করতে চাইলে বাস্তবতা সম্পর্কে যেকোনো বিশ্বাসকেই সন্দেহ করতে হবে"। আবার সক্রেটিস বলেছেন, "দুনিয়াকে জানার আগে নিজেকে জানতে হবে, যার একমাত্র মাধ্যম হল যৌক্তিক চিন্তা ভাবনা। মানুষের দুটো অংশ থাকে, যার প্রথমটি দেহ ও দ্বিতীয়টি আত্মা, আত্মায় আবার দুটো অংশ থাকে, এক হচ্ছে অযৌক্তিকতা, যা আমাদের আবেগ দ্বারা গঠিত এবং অপরটি হচ্ছে যৌক্তিকতা, যা আমাদের প্রকৃত রূপ। যৌক্তিকতা আমাদের মানসিকতার মানদণ্ড, যেখানে প্রশ্ন ওঠে প্রকৃত মানুষের সংজ্ঞা কী হতে পারে এবং আমাদের মানসিকতা সত্যিই মানুষের প্রকৃত সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে কি না?" ​ বিবর্তন হওয়া প্রাণীকুলে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার মাধ্যমই মানসিকতা, এই মানসিকতা আমরা যার মাঝে দেখতে পাই, তাকেই মহা বিজ্ঞ ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে জ্ঞানে বোধ করি, অনুসরণ করি। কারণ আমরা সবাই প্রকৃত মানুষ হতে চাই। মানুষ হওয়া যায় না, মানসিকতা চর্চা করতে হয়, যে যতদিন এই চর্চা করবে, সে ততদিন মানুষ হিসেবে আখ্যা পাবে আর যখন...

​সুন্দরের বিভৎসতা

এবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি নান্দনিক সুন্দরের পরিবেশগত ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে। পার্কে বসে আছি একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে প্রেমময়ী প্রেয়সীকে বরণ করে নেব বলে, বেঞ্চিতে বসে আছি দুজন, আমি বাদামের খোসা ছুলে জমাচ্ছি তার জন্য, আর সে আপন মনে উদাসীন বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় ফুলগুলোর এক এক পাপড়ি ছিঁড়ে একত্রে জড় করছে, মিষ্টি তার সে হাসি, কত উল্লাস, কত প্রাঞ্জল, কত স্নিগ্ধ সে হাসি। হঠাৎ আমি চমকে উঠি! আমি দেখি অদ্ভুত বিভৎস দেখা যাচ্ছে তার হাসিটা, তার হাতে একটি শিশুর মাথা আর সে ছিঁড়ে ছিঁড়ে মুখ থেকে মাংস, চামড়া, চোখ, কান খামচে খামচে ছিঁড়ে নিচ্ছে, আর এই ছেঁড়া মুণ্ডু আমিই এনেছি, প্রেয়সীকে বরণ করে নিতে। কোনো এক জল্লাদ পথে কাটা মুণ্ডু বিক্রি করছে, যার থেকে আমি কিনে এনেছি এই মুণ্ডুখানা, অতঃপর নিজেকে বুঝাতে শুরু করলাম, এ ভ্রম, যা এনেছি তা কেবলই ফুল। কিন্তু এই ফুলের মুগ্ধকর অনুভূতি, এ কি শুধুই অভিনয়? যা মুগ্ধ হবার মতো, তা কীভাবে ধ্বংস করা যায়? যদি যায়, তাহলে এটি কখনো মুগ্ধ হবার বিষয় হতে পারে না।

আত্মশুদ্ধি

আমার বোধগুলো যেন সুন্দরের প্রতি খুব ঋণী। যা দেখি সব যেন ফুটন্ত ফুলের মতো লাগে, প্রেম জাগে, লাগে মায়া, আবেগে আপ্লুত হই যখন সুন্দরকে খুঁজি প্রতিটা প্রাণে, প্রতিটা শিল্পে, প্রতিটা সৃষ্টিতে, প্রতিটা বোধে, প্রতিটা সুখের কাননে। ফুলেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মায়ের কোলে সুন্দর, একটি শাবকের প্রথম হাঁটতে শেখার দৃশ্যটা সুন্দর, সুন্দর একটি অনাহারীর আহার গ্রহণ, একটি শিশুর হাসি মাখা মুখ। সুন্দরকে আমরা ছুঁতে পাই হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে, এবং বোধ থেকে বিচার করি সুখ আর দুঃখকে। ​ সব সুন্দরই সুন্দর হয় না বরং চিরায়ত কিছু সত্য যা সুন্দর হবার কথা, কিন্তু আমাদের বোধে সুন্দর অনুভূতি জাগায় না, উদাহরণে বলা যেতে পারে প্রেমের তরে একটি ফুলের আত্মবিসর্জনের কথা, কোনো শিশুর হাতের খেলনা হয়ে খেলার ছলে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া ফুলটার ত্যাগের মহিমান্বিত একটা মর্মান্তিক গল্প, এগুলো মনে সুন্দর বোধ জাগায় না বরং এগুলোকে পৈশাচিক সুখের উপাদান মনে হয়। একটা প্রাণ সে যে সত্ত্বাধিকারী বা গোত্রীয় হোক, সে প্রাণের অনুভূতি সবারই সমান, সবাই তার জীবনের পূর্ণ স্বাদ পেতে চায়, মৃত্যু অনিবার্য হলেও সেটা স্বাভাবিকভাবে হওয়াই সবার প্রত্যাশা, জীবনের ...

ঈশ্বরের মাত্রা

​ ​দার্শনিক বার্কেলে এক প্রকার ঈশ্বরকে কল্পনা করতেন, যিনি তার অদৃশ্য শক্তির বলয়ে পৃথিবীর সমস্ত কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছেন। প্রথাগত ঈশ্বর নিয়ে কখনো কিছু না বললেও তিনি তাঁর দর্শনে একটি ঈশ্বরকে সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন এবং পেরেওছেন, একই রকম ঈশ্বরকে কল্পনা করেছেন ইহুদী লেখক ইউভাল নোয়াহ হারারি। হারারি বলেন, "অনেকগুলো মানুষ যখন কোনো বিষয়ের উপর বিশ্বাসে অটুট, তখন তা অবাস্তবও যদি হয়, তবুও তা সত্য, শাশ্বত"। এবং উদাহরণে হারারি বলেন টাকার প্রতি বিশ্বাসের কথা এবং সামাজিকভাবে এর ব্যবহারের প্রতি আমাদের আস্থার কথা। বার্কেলে বলেন, ঈশ্বর হচ্ছেন সকল মনের সমষ্টিগত বিশ্বাস, ওদিকে বাট্রান্ড রাসেলের কাছে ঈশ্বর হচ্ছেন "প্রকৃত বস্তুর" নামান্তর মাত্র, যার বিশেষ আদর্শগত বৈশিষ্ট্য থাকবে এবং সকলের সমষ্টিগত মনের উপর নির্ভর করবে, যা হারারির ধারণার সাথে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে হারারি বলছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মনের বিশ্বাসের উপরই নির্ভর করে কোনটা সত্য, কোনটা পবিত্র বা শাশ্বত।

​শিক্ষা প্রসঙ্গ

শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, শিক্ষা সবার জন্য প্রয়োজন। শিক্ষায় শিক্ষিত হবো আমি, শিক্ষায় শিক্ষিত হবে আমার বিবেক, শিক্ষায় শিক্ষিত হবে আমার বোধ, শিক্ষিত হবে আমার আচরণ ও ব্যবহার। তার সাথে শিক্ষায় শিক্ষিত হবে - আমার ভাই, বোন, আমার পরিবার, আমার বন্ধু। শিক্ষায় শিক্ষিত হবে পথে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটি, তার ছোট বোন বা বড় ভাইটি। শিক্ষা আমাদের অধিকার সচেতন হতে শেখায়, শিক্ষা আমাদের প্রকৃতিকে জানতে শেখায়, শিক্ষা আমাদের বিবেকে নিজের স্বরূপ বোধ জাগায়, শিক্ষা আমাদের মানবিক হতে শেখায়। শিক্ষা আমাদের ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়, শিক্ষা আমাদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে, শিক্ষা নন্দনতত্ত্বের কথা বলে। ​ এই পাঠ্য পড়ার মাঝে আপনারা শিক্ষার্থী আছেন, অভিভাবক আছেন, শিক্ষক সমাজের অনেকেই আছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী অথবা পড়াশোনা করার পর কী হবেন? আপনারা বলবেন, কেউবা শিক্ষক-শিক্ষিকা হবেন, সফল উদ্যোক্তা হবেন, সৎ উকিল হবেন কিংবা আদর্শবান ডাক্তার হবেন। মূলত অর্থনৈতিক মুক্তি কামনায় যখন শিক্ষা গ্রহণ করা হয়, তখন তা একটি জাতির মেরুদণ্ড অপেক্ষা ওই জাতিটার কলঙ্কেরই ধারক বাহক। তার জন্যই শ...

পরিবাথার প্রথা ও আত্মোৎসর্গ

আমাদের একজন বিজ্ঞানী আছেন, ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্যার, যিনি জগৎ খ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর সহপাঠী, বন্ধু এবং রুমমেটও ছিলেন। ড. জামাল নজরুল ইসলাম একটি বই লিখেছিলেন "The Ultimate Fate of the Universe" নামে ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৮৮ সালে মানে ৫ বছর পর স্টিফেন লিখেন "A Brief History of Time", যা স্টিফেনকে জগৎ বিখ্যাত করেছে। নজরুল ইসলাম স্যারের বড় মেয়ের বিয়েতে স্কটল্যান্ডের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন স্যারের বাসায়, তখন ওনার ছোট মেয়ে তার বান্ধবীদের সাথে হারমোনি নিয়ে গান রচনা করছে, হাসি ঠাট্টা করছে, যে দৃশ্যটা খুব গভীরভাবে আবেগাপ্লুত করেছিল স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানীকে এবং তিনি স্যারকে ডেকে বলছেন, "১০০ বছর আগে আমাদের সংস্কৃতিতে, আমাদের সমাজে, আমাদের জীবন ধারায় এমন অবস্থা ছিল, একসাথে বসে আমরা গান করতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটা আমরা স্থায়ীভাবে হারিয়ে ফেলেছি"। মূলত, পশ্চিমে আরো ১০০ বছর আগেই হারিয়ে গেছে পরিবার প্রথাটি। এই ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবার প্রথা এবং ইসলামিক পারিবারিক আচারে যে ঐতিহ্য এবং সৌহার্দ্য ফুটে ওঠে, তা যেন প্রেমেরই নামান্তর, অপর দিকে পশ্চিমে মুক্ত পুঁজিবাদের অবাধ বি...

​জ্ঞান বিভাজন

কোনো জ্ঞানকে কীভাবে কাজে লাগাবেন তা ব্যক্তির একক ইচ্ছায় আবৃত, সব জ্ঞান সবাইকে একই পথে পরিচালনা করে না। জ্ঞান শুধুমাত্র বুদ্ধির গোঁড়ার খুঁটি শক্ত করে বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত, উদাহরণ এবং পরিণতি সংক্রান্ত পাঠ্য দানে, আর এগুলো পুঁজি করে কেউবা রাষ্ট্রের খুঁটি মজবুত করে, আবার কেউবা নৈরাজ্যবাদী আন্দোলনের বীজ বপন করে জনমনে। কেউ হচ্ছেন নন্দিত, কেউবা হচ্ছেন নিন্দিত। খ্যাতির বিড়ম্বনায় সবাই পড়ছেন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। ​আমি যা লিখছি তা আমি নই, কেবলই তা আমার ক্ষণিকের ভাবনা মাত্র, প্রবন্ধে আমার প্রকাশ নেই। আমি এখন যা ভাবছি বা লিখছি, একটু পর বিপরীতমুখী ভাবনাও ভাবতে পারি, কোনো ভাবনাই শাশ্বত নয়, বরং প্রত্যেকেই যার যার দিক থেকে স্বতন্ত্র।

​শক্তির সঞ্চরণ

একটি লেখায় লুকিয়ে থাকেন লেখক স্বয়ং এবং তার চিন্তা, রুচি, যাপনের অবস্থা, জীবনের প্রতি দৃষ্টি, বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, শব্দের চয়ন ও ব্যবহার। বাক্যের প্রতিটি গঠনে যেন লুকিয়ে থাকেন লেখকের একেকটি মেজাজের আমেজ, যা পাঠককে হিপনোটাইজ করার মতো আঁকড়ে রাখে পাঠ্যে। জাদুকরী গল্পজালে বন্দি করে জ্ঞানের পথ দেখান লেখক। একটি লেখায় কেবল জ্ঞানই থাকে না, থাকে শিল্পগুণ, প্রাণবন্ততা, প্রাঞ্জলতা, ছন্দ, তাল, গল্প ও জীবন। একটি লেখা-ই যেন একটি ভাস্কর্য, যা হাজারটা দৃষ্টি, চিন্তা ও পরিকল্পনার জন্ম দেয়, দেয় একটা মৌলিক প্রাণের অস্তিত্বও, যেমনটা লেখক চাচ্ছেন। আবার একই লেখা একটি শিল্পও, যা প্রকৃত কোনো অর্থ বহন করে না। বরং এতে আছে একই ভাবের বিশেষ মাত্রা, যেমনটা আমরা সুরের রাগে খুঁজে পাই, যে রাগ ভাবেরই উচ্চ মার্গের প্রকাশ, যে ভাব বিভিন্ন সুরকার বিভিন্ন গানে প্রকাশ ঘটান। শিল্পও বিশেষ কোনো অর্থ বহনে বাধ্য নয়, বাধ্য বরং রাগের একটা মাত্রা বহনে, যে রাগের মাত্রা সমার্থক শক্তি যোগাবে দ্রষ্টার কল্পনার দৃশ্যপটে। ঠিক তেমনই একটি লেখা, যা বিশেষ অর্থ বহন করে না, বহন করে কিছু আত্মার, কিছু শক্তির, কিছু ব্যক্তিত্বের এবং এগুলো একত্রে আমরা আর...

​খ্যাতির বিড়ম্বনা

​একটি লেখা লেখকের পুনর্জন্ম দেয় শতাব্দীর শেষ লগ্নেও তার পাঠকের মনে, তা যেমন সত্য, তেমনই সত্য সময়ের ব্যবধানে সামাজিক ন্যায়নীতি সংক্রান্ত সামাজিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধের মধ্যেও বিশাল ব্যবধান তৈরি করে দেয় ঐতিহাসিকের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, যে কারণে কার্ল মার্ক্স, যিনি মার্ক্সবাদের জনক, তিনি সারা বিশ্বের বামপন্থীদের কাছে দেবতাতুল্য হলেও আর্জেন্টিনায় আর্জেন্টাইন নাগরিকদের কাছে কুখ্যাত ও নিন্দিত ব্যক্তি হয়ে আছেন, এই কারণে যে তিনি সমকামীদের হত্যা করেছিলেন। বাংলাদেশে যারা কট্টর ধার্মিক বা বামপন্থীদের নাস্তিক বলতেও দ্বিধা করেন না, তারা কিন্তু মার্ক্সের সমকামীদের হত্যা করাকে সমর্থন করেন, যদিও তারা জানেন না এবং জানতে আগ্রহীও নন কোন কারণে মার্ক্স সমকামীদের হত্যা করেছিলেন। ইসলামে সমকামিতা হারাম এবং শুধু এই একটা কারণেই ইসলামিক দেশগুলোতে তরুণ প্রজন্মের কাছে মার্ক্সবাদকে লুকানো হয় না, বরং মার্ক্স যেন হুট করেই জন্মও নিয়েছিলেন এ বাংলায় সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ শিকদার নামে, যিনি বিশেষ করে মাওবাদী কমরেড ছিলেন। মাওবাদীদের উগ্র পন্থাকে জঙ্গিবাদ বলে নিষিদ্ধ করে রাখে প্রায় সকল দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রই, কিন্তু মাওবা...

যাপনে জীবনের প্রভাব

​একের পর এক শব্দ লিখছি আর কাটছি, কিন্তু কোনো পূর্ণ বাক্যই গঠন করতে পারিনি, যা আমার লেখায় শব্দ ছন্দের নৃত্যে আশ্চর্য কিছু বোধ জাগাবে। এ যেন লেখকের মনের ভাবের অনেকটা কাছাকাছি, যা সৃজনশীল চিন্তায় শৈল্পিক বিকাশ ঘটাবে। লেখার মতো অনেক বিষয় থাকে, অনেক গল্প থাকে, থাকে অনেক বাক্য, ছন্দ, লয় আর ভাষা। এগুলোই মূলত একটা লেখার প্রাণ, হোক সেটা প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, রচনা কিংবা মতবাদ।